গাড়ির অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যন্ত্রাংশর আলোচনা- যেমন ইঞ্জিন, ট্রান্সমিশন, ব্রেকস, ব্যাটারি, সাসপেনশন, লাইটস, টায়ার ইত্যাদি। প্রতিটি যন্ত্রাংশের কাজ, গুরুত্ব ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
গাড়ির ভেতরে-বাইরে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ থাকে যা গাড়িকে সচল এবং সুরক্ষিত রাখে। গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখা জরুরি, কারণ এটি গাড়ির মেরামত এবং সঠিক রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে।
গাড়ির যন্ত্রাংশ কীভাবে ভাগ করা যায়?
গাড়ির যন্ত্রাংশগুলো প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
১. অভ্যন্তরীণ যন্ত্রাংশ
২. বাহ্যিক যন্ত্রাংশ
প্রতিটি যন্ত্রাংশের নির্দিষ্ট কাজ থাকে এবং তাদের কার্যকারিতা গাড়ির পারফরমেন্সের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
সামনের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রাংশ
ইঞ্জিন
ইঞ্জিন হলো গাড়ির হৃদপিণ্ড, যা জ্বালানী শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। ইঞ্জিনের প্রধান অংশগুলো হলো: ইঞ্জিন ব্লক, পিস্টন, ক্র্যাঙ্কশ্যাফ্ট, ক্যামশ্যাফ্ট এবং সিলিন্ডার হেড।
ট্রান্সমিশন (গিয়ারবক্স)
ট্রান্সমিশন বা গিয়ারবক্স সিস্টেম ইঞ্জিনের শক্তিকে চাকায় পৌঁছাতে সাহায্য করে। গাড়ির গিয়ার পরিবর্তন করে গাড়ির গতি বাড়ানো বা কমানোর সময় নিরাপদ ট্রানজিশনের জন্য কাজ করে। ট্রান্সমিশন দুই প্রকারের হতে পারে— ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন এবং অটোমেটিক ট্রান্সমিশন। ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন ব্যবহারকারীকে নিজ হাতে গিয়ার পরিবর্তন করতে হয়, যেখানে অটোমেটিক ট্রান্সমিশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে গিয়ার পরিবর্তন করে।
ট্রান্সমিশনের প্রধান অংশসমূহ:
টর্ক কনভার্টার: এটি ইঞ্জিন এবং ট্রান্সমিশনের মধ্যে টর্ক (বাঁকানো শক্তি) পরিচালনা করে।
গিয়ারসেট: প্ল্যানেটারি গিয়ারসেট গাড়ির বিভিন্ন গিয়ার রেশিও নিয়ন্ত্রণ করে, যা গাড়ির গতি এবং শক্তি পরিবর্তনের জন্য কাজ করে।
ক্লাচ: ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন ব্যবহারের ক্ষেত্রে ক্লাচ প্যাডেল ব্যবহার করে ড্রাইভার গিয়ার পরিবর্তন করতে পারেন।
ভালভ বডি: এটি অটোমেটিক ট্রান্সমিশন সিস্টেমে তেলের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে গিয়ার পরিবর্তন করতে সাহায্য করে।
ব্যাটারি
ব্যাটারি গাড়ি চালু করার জন্য শক্তি সরবরাহ করে এবং ইঞ্জিন বন্ধ থাকলেও লাইট, স্টেরিও, জিপিএস-এর মতো যন্ত্রাংশ চালু রাখে।
অল্টারনেটর এবং রেডিয়েটর
অল্টারনেটর রাসায়নিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। যা ইঞ্জিনের ব্যাটারি এবং গাড়ির অন্যান্য বৈদ্যুতিক উপাদানগুলিকে চার্জ করতে এবং পুনরায় ব্যবহার করার জন্য কাজ করে। অন্যদিকে, রেডিয়েটর ইঞ্জিনের অতিরিক্ত তাপ সরিয়ে গাড়িকে ঠান্ডা রাখে।
পেছনের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রাংশ
ব্রেকস
প্রতিটি গাড়ির সামনের দুটি এবং পেছনের দুটি ব্রেক থাকে, যা গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
কনভার্টার
কনভার্টার ইঞ্জিনের ধোঁয়া থেকে ক্ষতিকারক যৌগগুলোকে নিরাপদ গ্যাসে রূপান্তরিত করে। এটি গাড়ির পরিবেশ দূষণ কমাতে সহায়ক।
মাফলার এবং টেইলপাইপ
মাফলার ইঞ্জিনের অতিরিক্ত শব্দ ও ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ করে, আর টেইলপাইপ ক্ষতিকারক গ্যাসগুলোকে গাড়ি থেকে নিরাপদে নিষ্কাশন করে।
সাসপেনশন
গাড়ির সাসপেনশন সিস্টেমে সম্মুখ ও পশ্চাৎ সাসপেনশন অন্তর্ভুক্ত, যা স্থিতিশীলতা এবং রাইডিং অভিজ্ঞতা উন্নত করে। সম্মুখ সাসপেনশন সামনের নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, পশ্চাৎ সাসপেনশন পিছনের টায়ারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। উভয়ই নিরাপত্তা ও পারফরম্যান্সের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বাহ্যিক যন্ত্রাংশ
লাইটস
গাড়িতে প্রায় ১৬ ধরনের লাইট থাকে। হেডলাইট, ফগ লাইট, টেইল লাইট গাড়ি চালানোর সময় দৃষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
টায়ার এবং চাকা
গাড়ির চাকার তিনটি মূল অংশ— টায়ার, রিম, এবং হাব। টায়ার গাড়ির স্থিতিশীলতা এবং গতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
স্টিয়ারিং
স্টিয়ারিং সিস্টেম গাড়ির দিক নির্দেশনা নিয়ন্ত্রণ করে এবং সঠিকভাবে গাড়ি চালাতে সাহায্য করে।
উইন্ড শিল্ড এবং ওয়াইপার
উইন্ড শিল্ড গাড়ির সামনে একটি কাঁচের শিল্ড, যা চালককে বায়ু ও আবহাওয়া থেকে রক্ষা করে। ওয়াইপার ব্যবহৃত হয় উইন্ড শিল্ডের ওপর জমে থাকা বৃষ্টি বা ধুলাবালি পরিষ্কার করার জন্য, যা দৃষ্টির সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং নিরাপদ ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
গাড়ির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এর যন্ত্রাংশ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। এটি মেরামতের সময় গাড়ির সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানে সহায়তা করে এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার নিশ্চিত করে। গাড়ির মডেল ভেদে যন্ত্রাংশে পার্থক্য রয়েছে, তবে এখানে আলোচিত যন্ত্রাংশ গুলো সব গাড়িতে থাকে।
শখের গাড়ি নিরাপদে চালানোর জন্য দেশের সর্বাধুনিক ট্রেইনিং স্কুল পাথওয়ে ড্রাইভিং স্কুল এ ভর্তি নিশ্চিত করতে পারেন। যা বিস্তারিত জানতে দেখুন ভর্তি প্যাকেজ সমূহ।
FAQ – সাধারণ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন: বাংলাদেশে কোথায় গাড়ির যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়?
উত্তর: ঢাকার বঙ্গবাজার, গাবতলী, চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা ও বিভিন্ন অনলাইন অটোপার্টস শপে সহজেই গাড়ির যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: গাড়ির ব্রেক কিভাবে যাচাই করবো?
উত্তর: ব্রেক প্যাড ও ডিস্ক চেক করা, ব্রেক ফ্লুইড পরিবর্তন করা এবং অস্বাভাবিক শব্দ হলে সঙ্গে সঙ্গে মেকানিক দেখানো।
প্রশ্ন: গাড়ির অল্টারনেটর খারাপ হলে কী সমস্যা হয়?
উত্তর: ব্যাটারি চার্জ হয় না, গাড়ি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং লাইট বা ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে।