Post Image

বাংলাদেশে হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম ও নিরাপত্তা টিপস

বাংলাদেশে হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর সময় চালকদের গতি সীমা, ওভারটেকিং নিয়ম, ডান লেন ব্যবহার, সিগন্যাল এবং জরুরি ব্রেক ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা মেনে চলা বাধ্যতামূলক। হেলমেট ও সিটবেল্ট পরিধান, মোবাইল ব্যবহার না করা এবং গাড়ির ফিটনেস যাচাই করাও অত্যন্ত জরুরি। নিরাপদ ভ্রমণের জন্য এ নিয়মগুলো জানা এবং অনুসরণ করা চালকের দায়িত্ব।


বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা দিন দিন উন্নত হচ্ছে এবং সেই সঙ্গে বাড়ছে হাইওয়ের সংখ্যা। ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহসহ একাধিক হাইওয়ে ইতোমধ্যেই চালু হয়েছে এবং প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন এই সড়কগুলো ব্যবহার করছে। তবে হাইওয়েতে গাড়ি চালানো, শহরের ভিতরে চালানোর চেয়ে ভিন্ন এবং বেশি দায়িত্বশীলতা ও নিয়ম মেনে চলার দাবি রাখে।

১. ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং রেজিস্ট্রেশন আপডেট রাখা

হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর জন্য বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। এর পাশাপাশি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস সনদ এবং ইন্স্যুরেন্স কাগজপত্র সব সময় গাড়িতে রাখতে হবে। ট্রাফিক পুলিশ যেকোনো সময় তা যাচাই করতে পারে।

২. সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ গতিসীমা মেনে চলা

বাংলাদেশে হাইওয়েতে গাড়ির গতিসীমা নির্ধারিত রয়েছে। সাধারণত ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য সর্বোচ্চ গতি ৮০–১২০ কিমি/ঘণ্টা এবং পণ্যবাহী বা যাত্রীবাহী বাসের জন্য কম রাখা হয়। তবে কোথাও কোথাও সর্বনিম্ন গতিও নির্ধারিত থাকে, যেমন ৬০ কিমি/ঘণ্টা। এতে ট্র্যাফিক সচল থাকে এবং দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কমে।

৩. ওভারটেকিংয়ের নিয়ম মেনে চলুন

হাইওয়েতে ওভারটেক করতে হলে আগে দিক নির্দেশনামূলক সিগন্যাল দিতে হয়। বাঁ পাশ থেকে নয়, ডান পাশ দিয়েই ওভারটেক করা উচিত। হঠাৎ গতি বাড়িয়ে বা হর্ন বাজিয়ে ওভারটেক করা ঝুঁকিপূর্ণ ও ট্র্যাফিক আইনের পরিপন্থী।

৪. লেন ডিসিপ্লিন বজায় রাখা জরুরি

প্রতিটি হাইওয়েতে নির্দিষ্ট লেন থাকে। গাড়ির ধরণ ও গতির ওপর ভিত্তি করে সেই লেন ব্যবহার করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, ধীরগতির যানবাহনকে বাম লেনে এবং দ্রুতগতির যানবাহনকে ডান লেনে চলতে হয়। লেন পরিবর্তনের সময় ইনডিকেটর ব্যবহার করতে হবে।

৫. স্পিড ব্রেকার ও টোল পয়েন্টে ধীর গতি বজায় রাখা

হাইওয়েতে বিভিন্ন স্থানে টোল পয়েন্ট, ইউটার্ন, কিংবা জরুরি গেট থাকে। এসব জায়গায় স্পিড কমিয়ে সতর্কভাবে গাড়ি চালানো উচিত। টোল দেয়ার সময় লাইনে দাঁড়ানো ও অগ্রাধিকার দেওয়া ভদ্রতা ও শৃঙ্খলার বহিঃপ্রকাশ।

৬. হেডলাইট ও হ্যাজার্ড লাইট সঠিকভাবে ব্যবহার করুন

রাতের বেলা হাইওয়েতে হাই বিম ব্যবহার না করাই উত্তম, বিশেষ করে সামনে বিপরীতমুখী গাড়ি থাকলে। ঝুঁকিপূর্ণ বা জরুরি অবস্থায় হ্যাজার্ড লাইট ব্যবহার করুন, যেন অন্য চালকেরা সতর্ক হতে পারে।

৭. টায়ার ও ব্রেক সিস্টেম নিয়মিত পরীক্ষা করুন

হাইওয়েতে গতি বেশি থাকার কারণে যেকোনো সময় ব্রেক ফেল বা টায়ার বিস্ফোরণের ঝুঁকি থাকে। তাই যাত্রার আগে টায়ার প্রেশার, ব্রেক প্যাড, অয়েল লেভেল, ব্যাটারি ইত্যাদি ভালোভাবে চেক করে নেওয়া উচিত।

৮. হাইওয়েতে যাত্রী ওঠানামা নিষেধ

বাংলাদেশের হাইওয়েতে নির্দিষ্ট পয়েন্ট ছাড়া যাত্রী ওঠানো বা নামানো দণ্ডনীয় অপরাধ। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক গুণ বেড়ে যায়। তাই যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বাস স্টপ বা টার্মিনাল ব্যবহার করুন।

৯. জরুরি নম্বর ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সঙ্গে রাখুন

হাইওয়েতে কোনো সমস্যা হলে হাইওয়ে পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স কিংবা টো ট্রাকের সহায়তা দরকার হতে পারে। এজন্য জরুরি নম্বরগুলো মোবাইলে সেভ করে রাখা এবং গাড়িতে জ্যাক, অতিরিক্ত টায়ার, ফার্স্ট এইড বক্স রাখা উচিত।

১০. হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক আইনের প্রতি সম্মান

হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর সময় হাইওয়ে পুলিশের নির্দেশ মেনে চলা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা চালকের দায়িত্ব। পুলিশ যদি থামতে বলে, থামুন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখান। কোনো পরিস্থিতিতেই ঝগড়া বা অসৌজন্যমূলক আচরণ করবেন না।

WhatsApp Chat